পিঠা পার্বণে মুখরিত শিল্পকলা একাডেমি

প্রকাশঃ জানুয়ারি ২৯, ২০১৬ সময়ঃ ৫:৪৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:১৬ অপরাহ্ণ

সাদিয়া কানিজ

পিঠাচারিদিকে পিঠার পসরা। নানান রং, নকশা আর ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের পিঠা। এর গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ। পুরনো দিনের মতো পিঠার স্বাদ নিতে সেখানে মৌমাছির মত ভিড় জমিয়েছে রাজধানীর মানুষ। কেউ খাচ্ছে পাটিসাপটা, কেউ পুলি, কেউবা ঝালপো। কেউ এসেছে বন্ধুর সাথে কেউ আবার বাবা মায়ের সাথে। সব মিলিয়ে সেখানে চলছে পিঠার পার্বণ।

এ দৃশ্য এখন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। নিজ এলাকার হরেকরকম পিঠা নিয়ে সেখানে ৩৬ টি স্টল সাজিয়েছে পিঠা শিল্পীরা। নবমবারের মতো এ পিঠা উৎসব শুরু হয়েছে ২২ জানুয়ারি থেকে। আজ এ উৎসবের শেষ দিন। ব্যস্ত মানুষগুলো পুরনো ঐতিহ্যের স্বাদ নিতে যেন ছুটে এসেছে সেখানে।

আগে অগ্রহায়ণ- মাঘ মাসে গ্রামের ঘরে ঘরে চলতো পিঠার পসরা। কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তুলতেন। গাঁয়ের বধুরা ভোর রাতে উঠে তৈরি করতেন পিঠাপুলি। সারাদিন নানারকম পিঠার গন্ধে ভরে যেত বাড়ির আশপাশ। পিপিঠা খেতে উঠানে ভীড় জমাতেন মেয়ে জামাইসহ সব বসয়ী ছেলে-মেয়েরা।

মাঘ মাসের শীতে পিঠা বানানোর সেই ধুম চোখে মেলা ভার। জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত শহরে পাড়ি জমায় গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ। ইট কাঠের তৈরি শহরে এসে মানুষের রুচিও যেন তেতো হয়ে যায়। এভাবেই কি ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাঙ্গালিরা? না এখনো ভুলেনি বাঙ্গালি। জোর দিয়ে এ কথাটি বলার কারণ, শিল্পকলা একডেমির প্রাঙ্গণে চলা ‘জাতীয় পিঠা উৎসবে-১৪২২’ দর্শনার্থীর ভিড় দেখে। শহরাঞ্চলে পিঠা সংস্কৃতির ধারা বজায় রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় পিঠা উৎসব পরিষদ। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ববধানে রয়েছে ‘কফি হাইজ’।

সংস্কৃতি অনুযাপিঠায়ী বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় পিঠার ধরণ স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন। তাই শহুরে মানুষদের সব ধরনের স্বাদ দিতে ৩৪ টি জেলার সংস্কৃতিতে তৈরি করা হয়েছে দেড় শতাধিক প্রকারের পিঠা।

সারাদিনের কাজ শেষে মানুষ সন্ধ্যায় ভিড় জমায়। সববয়সী মানুষের উপস্থিতিতে জমে উঠে পিঠা উৎসব। এমনটি জানালেন, যশোর পিঠা ঘরের পিঠাশিল্পী।

নোয়াখালি পিঠা শিল্পী সুমন জানান, ‘নোয়াখালির বিখ্যাত পিঠার কারণে ভিড় দেখা যায় এই পিঠাঘরে । আমাদের এখানে রয়েছে প্রায় ৩২ রকমের পিঠা। এর মধ্যে রয়েছে ঝালপো, নকশী, কুলী, ডিম চিতই, রস পিঠাসহ হরেক রকম পিঠা। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে আমাদের স্টলে।

স্টলগুলো ঘুরে দেখা গেলো নকশি পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, ডিম চিতই পিঠা, দোল পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, পাকান, আন্দশা, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল পিঠা, চুটকি পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, পাতা পিঠা, ঝুড়ি পিঠাসহ হরেক রকম পিঠার পসরা রয়েছে মাঠ জুড়ে।

পিঠা খেতে আসা মিথিলা ফারজানা বলেন, পিঠার গন্ধে মন ভরে যাচ্ছে। তৃপ্তির সাথে পাটিসাপটা আর ঝালপো পিঠা খেয়েছি। এমন আয়োজন আরও বড় পরিসরে হওয়া উচিৎ।

পিঠা উৎসব সম্পর্কে জানতে চাইলে উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কফি হাউসের স্বত্বাপিঠা উৎসবধিকারী খন্দকার শাহ আলম বলেন, পিঠা বাংলাদেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যস্ততার কারণে এই সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে মানুষ। সেই সংস্কৃতি মনে করিয়ে দিতেই আমাদের এ আয়োজন। প্রত্যেক দিন অন্তত ৫-৬ হাজার পিঠা প্রেমী আসে মেলায়।

তিনি আরো জানান, জায়গা স্বল্পতার কারণে এ বছর প্রায় ২০ টিস্টলকে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা বড় সীমাবদ্ধতা। রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে এ উৎসব হওয়ার কথা থাকলেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে স্বল্প পরিসরেই আয়োজন করতে হয়েছে। তবে বড় পরিসরে এ উৎসবের আয়োজন করলে সংস্কৃতি বিলীন হবে না শহুরে মানুষগুলোর মন থেকে।

শহরাঞ্চল তো নয়ই গ্রামের মানুষগুলোও যেন ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তাদের সংস্কৃতি। কিন্তু বাঙ্গালির এ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দিতে এখনো রয়েছে কিছু উদ্যোগতা। তাদের কারণেই রাজধানী শহরে শীতে জমে পিঠা উৎসব।

কিন্তু শহরাঞ্চলে পিঠা সংস্কৃতির ধারা প্রতিটি ঘরে বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি বাজলেও কিছু কিছু সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ‘পিঠা উৎসব ’পালন করে যাচ্ছে। এতে রক্ষা পাচ্ছে বাঙালির আদি সংস্কৃতি।

 

 

প্রতিক্ষণ/ এডি/ এল জেড

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G